আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর ৯০তম জন্মবার্ষিকী এবং জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল এর ৭১তম জন্মবার্ষিকী (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ দূতাবাস রোম, ইতালিতে ৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে ছুটির দিনে দূতাবাসে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কন্স্যুলার সেবা প্রদান করা হয়। সর্বমোট ৩২০ জনকে বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৯ জনকে পাসপোর্ট এনরোলমেন্ট, ৪৯ জনকে সার্টিফিকেট, ৮০ জনকে পাসপোর্ট ডেলিভারি এবং ১২ জনকে অন্যান্য সেবা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাসে স্থানীয় সময় বিকাল ৭ টায় এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু করা হয়। এরপর বঙ্গমাতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল এর কর্মময় জীবনের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এর মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। এরপর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ।

ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ যাঁরা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত জানান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর ৯০তম জন্মবার্ষিকী ৮ আগস্ট এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল এর ৭১তম জন্মবার্ষিকী হচ্ছে ৫ আগস্ট। দুই জনের জন্মবার্ষিকী কাছাকাছি হওয়ায় দূতাবাস একসাথে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর অবদান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ছিলেন না, বাঙালি মুক্তিসংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রদূত। মান্যবর রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, বঙ্গমাতা তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতা, সাহস ও মনোবল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং বিজয়ের পরে দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্যাতিত নারীদের জন্য গড়ে তোলেন নারী পূণর্বাসন কেন্দ্র। রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনীর হয়েও তিনি সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন। সেজন্য গণভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল সম্পর্কে মান্যবর রাষ্ট্রদূত বলেন, শেখ কামাল ছিলেন বঙ্গন্ধুর সুযোগ্য পুত্র। তিনি ছিলেন বহুগুণে গুনান্বীত। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার যেমনি ছিল একজন সুযোগ্য নেতার সকল বৈশিষ্ট্য, তেমনি তিনি ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম
মান্যবর রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেই কালো রাতে বাঙালি জাতি শুধু জাতির পিতাকে হারায়নি, হারিয়েছে মমতাময়ী বঙ্গমাতা এবং ভবিষ্যৎ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কান্ডারী শেখ কামালসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে। ১৫ আগস্টের কালো রাতে বেঁচে যাওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা ও বঙ্গমাতা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে স্বপ্ন দেখতেন সেটা বাস্তবায়নের জন্য দূরদর্শি নেতৃত্বের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গত এক দশক ধারাবাহিকভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি অর্জন করেছে এবং গত কয়েক বছর তা ৮ শতাংশ অতিক্রম করেছে। সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
আলোচনা সভা শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রয়াত সকল সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, ইতালি প্রবাসী সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং কন্স্যুলার সেবা গ্রহণে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।