আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: আজ ৪ এপ্রিল, ২০২০ থেকে ইতালিতে ২য় ধাপে লকডাউন কিছুটা শিথিল হচ্ছে। জনমনে স্বস্তি এবং আনন্দে আত্মহারা ছোট ছোট শিশুরা। ইতালীর জনগণ দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকার পর আজ থেকে তাদের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা আংশিক ফিরে পাবে। তবে বাহিরে বের হবার সময় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবেন। মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। বাহিরে বের হবার সময় বাধ্যতামূলক মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। অনুর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সের নীচে লিগ্যাল গার্ডিয়ানের সাথে বের হবার সুযোগ আছে। পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করা যাবে, তবে সেটা পিতা-মাতা, স্ত্রী-স্বামী, ভাই-বোন হতে হবে। চাচা চাচি-মামা-মামির সাথে দেখা করার অনুমতি নেই। নাতি-নাতনিরা দাদা-দাদী/নানা-নানীর সাথে প্রয়োজনীয় সেফটি মেনে সাক্ষাৎ করতে পারবে। কোন জনসমাগম করা যাবে না । অবিবাহিত জুটি যারা এখনও একত্রে বসবাস করে না তারা সাক্ষাৎ করতে পারবে। পারিবারিক বড় অনুষ্ঠান অথবা পুনর্মিলন করা যাবে না। খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়, চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ এবং ফার্মেসিতে যাওয়া যাবে। কুকুর নিয়ে বের হওয়া যাবে এবং শরীর চর্চা করা যাবে। অবশ্য এখানেও দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
গণপরিবহনে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে। কেউ যদি এই মুহূর্তে নিজের রেসিডেন্টের বাইরে অন্য জেলায় (রিজিওনে) অবস্থান করে তাহলে নিজ (রিজিওনে) জেলায় ফিরতে পারবে। তাছাড়া জরুরী চাকরি, স্বাস্থ্যগত কারণ এবং অন্যান্য জরুরি কাজে অন্য (রিজিওনে) জেলায় যেতে পারবে, নিজের শহরে (রিজিওনে) বিনা কারণে স্বাধীনভাবে ভ্রমণের অনুমতি নেই (উল্লেখ থাকে যে, ঘরের বাহিরে যে কারণেই বাইর হবে না কেন, সবক্ষেত্রে নতুন অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হবে, যা যার যার মিনিসিপাল অনলাইন থেকে নিতে হবে)। এটা ইতালি সরকারের দেয়া নিয়ম। কারণ এর বাহিরে গেলে পুলিশ প্রশাসন বাধা দিয়ে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে এবং জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নিজের এলাকায় হাঁটা, দৌড়ানো এবং সাইক্লিংয়ের অনুমতি আছে। জনগণ ইচ্ছা করলে নিজ এলাকার লেক, সমুদ্র সৈকত এবং পর্বতমালায় ভ্রমণ করতে পারবে, তবে একত্রে বেশী লোক সমাগম হবার অনুমতি নেই। একে অপরের থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্বে অবস্থান করতে হবে। কন্সট্রাকশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, পাইকারী বিক্রেতা এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর কার্যক্রম চালু হবে। রেস্টুরেন্ট, বার, (কফি শপ) পাস্তিচচেরিয়ে ( কনফেকশনারি ) জেলাতেরিয়ে (আইসক্রীম) তাদের সার্ভিস চালু করতে পারবে৷ তবে ১০০ থেকে ৩০০ সিটের উপরে যে সব রেস্টুরেন্ট সেগুলোতে মাত্র ১০ টি সিট থাকবে তাও ১ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে। ছোট ছোট ছোট রেষ্টুরেন্টগুলো থেকে খাবার কিনে নিয়ে যেতে হবে, ভিতরে বসে খাবার কোন অনুমতি নেই। গ্রাহকরা সেখানে অবস্থান করে খেতে পারবে না। বাধ্যতামূলক বাসায় নিয়ে যেতে হবে। ৪ মে, ২০২০ থেকে ১৮ মে, ২০২০ পর্যন্ত শিথিলকৃত এই লকডাউনে, বোঝা যাবে যাবে জনগণ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে কিনা? অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত রোগী কিংবা মৃত্যুর সংখ্যা যদি বেড়ে যায় তাহলে ইতালি সরকার জনগণের স্বার্থে আবার কঠিন লকডাউন দিতে বাধ্য হবে। কাজেই সরকার জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান করেছে, যেন সরকারের দেয়া নিয়মকানুনগুলো কঠোর ভাবে মানা হয়। কিছু মহল থেকে যদিও বলা হয়েছে ২০২১ পর্যন্ত ইতালিতে টুরিস্ট নিষিদ্ধ, কিন্তু সরকারি মহল থেকে এ ধরনের কোনো বার্তা এখনো আসেনি, এটা সম্পূর্ণ গুজব। যদিও অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরা আপাতত এই বছর টুরিস্টদের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার পরামর্শ এবং মতামত দিয়েছেন। তবে সম্ভবত এই গ্রীষ্ম থেকেই টুরিস্টদের জন্য ইতালির দরজা খোলা হতে পারে। ইতালি সরাসরি টুরিস্টদের এখনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, ইতালির অনেক বিমানবন্দর এখনও খোলা রয়েছে। তবে বেশীরভাগ এয়ারলাইন্স তাদের যাত্রা স্থগিত করেছে। ইতালির রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা আল ইতালিয়া তাদের ইউরোপীয় ফ্লাইট চালু রেখেছে। তবে ক্রুজশীপ থেকে যাত্রীদের ইতালির বন্দরে অবতারণ নিষিদ্ধ।
বিদেশ থেকে আগতদের বাধ্যতামূলক দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সেইসাথে তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে কি কারণে ইতালি ভ্রমণ করছে। ইতালিতে কোথায় সেল্ফ আইসোলশনে থাকবে, সেখানে কিভাবে যাবে, ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার এয়ারলাইন্স অথবা ট্রাভেল কোম্পানীকে প্রদান করতে হবে। জ্বর, সর্দি অথবা কভিড-১৯ এর কোন লক্ষ্মণ থাকলে সেটা অবশ্যই ইতালিয়ান স্বাস্থ্যসেবা কতৃপক্ষকে জানাতে হবে। মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তিন হাজার ইউরো জরিমানা করা হবে। আগত যাত্রীরা গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারবেন না, পরিচিত কারো গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ট্যাক্সি অথবা রেন্ট-এ কার ব্যবহার করে নিজ গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে হবে। যাত্রীদের নিজেদের ব্যবস্থা না থাকলে সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। খরচের বিষয় হলে ইতালিতে আগত যাত্রীকে নিজে বহন করতে হবে। উল্লেখ থাকে যে উপরোেল্লেখিত সরকারি নিয়ম গুলো জনগণকে মানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ।