আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চীনের উহান শহরে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। করোনাভাইরাস আতঙ্কে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ, চোখে ঘুম নেই, আতঙ্কে হাসতে ভুলে গেছে মানুষ। জনগণকে সুরক্ষা দিতে ইতালি সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সবসময় । ইতালির প্রেসিডেন্ট ইতালির জনগণকে সুস্থ্য রাখার জন্য, ভালো থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো । তবে আশার কথা ইতালিতে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ও আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ৬ এপ্রিল, ২০২০ সোমবার করোনা ভাইরাস নতুন আক্রান্ত তুলনামূলক কম হলেও মৃত্যুবরণ করেছে ৬৩৬ জন। ৫ এপ্রিল, ২০২০ রবিবার মৃত্যুবরণ করেছে ৫২৫ জন যা গত ১৯ মার্চের পরে সবচেয়ে কম।

এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে ৮৭ জন ডাক্তার নার্স রয়েছে। সর্বোচ্চ একদিনে নতুন আক্রান্ত ৩ হাজার ৫৯৯ জন যা ইতালিয়ান এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের হতাশার মধ্যে ঠেলে দেয়। এ দেশের সরকার এর নিয়ম কানুন মানুষ মেনে চলার পাশাপাশি ডাক্তার এবং নার্সদের প্রাণপণ সেবা যত্নের কারণে দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ৫ এপ্রিল, ২০২০ রবিবার এ সংখ্যা ছিল মোট তিন হাজার ৮৯৮ জন ।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১০২২ জন । চিকিৎসাধীন ৯৩ হাজার ১৮৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ৫৭৪ জন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি। তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২২ হাজার ৮৩৭ জন।
ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। ৬ এপ্রিল, ২০২০ সোমবার এ অঞ্চলে মারা গেছে ২৯৭ জন। গতকালের চেয়ে আজ সংখ্যায় বেশি, ৫ এপ্রিল, ২০২০ রবিবার মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ২৪৯ জন। ৪ এপ্রিল, ২০২০ শনিবার এ সংখ্যা ছিলো ৩৪৫ জন। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে নয় হাজার ২০২ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৩৪জন। ৬ এপ্রিল, ২০২০ সোমবার মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৮৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৪৩ জন।
উল্লেখ্য,লোম্বারদিয়ার প্রেসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা জানান, আজ (৬ এপ্রিল, ২০২০) থেকে চালু হচ্ছে আপদকালীন অস্থায়ী হাসপাতাল ফেয়ারা মিলানো সিটি। ফেয়ারা মিলানো সিটি পরিণত হয়েছে ইতালির সবচাইতে বড় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ২০০ আইসিইউ বেড সম্বলিত অত্যাধুনিক এই হাসপাতালটিতে পলি ক্লিনিকের তত্বাবধানে ২০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৫০০ অভিজ্ঞ নার্স এবং ২০০ স্বাস্থ্যকর্মী চব্বিশ ঘণ্টা নিয়োজিত থাকবেন ,ভয়ংকর জীবাণু কোভিড-১৯ আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে। তিনি আরো বলেন এখনো অনেক লোক অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করছে। তিনি সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি বলেন, কেউ মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হবেন না।লোম্বারদিয়া এলাকায় ফার্মেসী গুলোতে সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে জনসাধারণের জন্য মাস্কএবং গ্লাভস ফ্রিতে দেয়া হবে। এ অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এদিকে সারা ইতালি জুড়েই চলছে লকডাউন। সামনে স্টার সানডে, তাই স্টার সানডেকে সামনে রেখে ইতালির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেগা নর্দ নেতা মাথেও সালভিনি আবারও দেশের এই দূর্যোগ মুহূর্তে সব গীর্জা গুলোকে প্রার্থনা জন্য খুলে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন দেশের এই দুর্দিনে আমাদের প্রত্যেকেরই প্রার্থনা করা উচিত।এদিকে ইতালির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিনা শর্তে ২৫ হাজার ইউরো পযর্ন্ত লোন দেয়ার একটি বিল অর্থমন্ত্রণালয় থেকে পাশ করা হয়েছে। আর এ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭ বিলিয়ন ইউরো। ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে পোষ্ট অফিসে বয়স্ক ভাতা নিতে যাওয়া লোকজনদের ভীড় সামলাতে ক্যারাবিনেরি (carabinieri ) ও সেনা মোতায়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের (Giuseppe Conte) আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের এই দূরদিনে ৭ হাজার ২২০ জন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্সও এম্বুলেন্স কর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিতে করোনায় আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে যা ইতালির ইতিহাসে বিরল । এই মহৎ কাজটার জন্য সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে মানবিক মানুষগুলো এদিকে গত ৪ এপ্রিল, ২০২০ শনিবার এবং ৫ এপ্রিল, ২০২০ রবিবার মিশর ও চীন থেকে ইতালিতে বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী এসে পৌঁছেছে। শনিবার মিশরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে ইতালিতে এসেছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় আলবেনিয়া, চীন ,কিউবা এবং রাশিয়া থেকে আগত মেডিকেল টিম ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রান্তদের নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে।