নজরুল ইসলাম হাবিবী, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
জীবন ও জগতের জন্য এদিক ওদিক না তাকিয়ে, হায় হুতাশ না করে, ডাক্তার কবিরাজের কাছে না গিয়ে নিজেই নিজেকে দেখুন-আয়নার সামনে দাঁড়ান।
মসজিদ মন্দিরে যাবার আগে অথবা নেতা হবার স্বপ্ন দেখার পূর্বে আপনি আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারেন। আপনি জেনে যাবেন আল্লাহ বা ভগবান আপনার কে।
আয়নাতে আপনি যখন আপনাকে দেখবেন, আপনার চোখ মুখ দেখে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, আপনি কেমন ছিলেন,আজ কেমন আছেন এবং আগামী দিনটি কেমন থাকবেন।
আমি যখন আয়নার সামনে দাঁড়াই তখন আয়না আমাকে বলে দেয় আমি কি বা কে। আমি সৎ না অসৎ। আমি জান্নাতী না জাহান্নামী। মানুষের অবয়বে স্বর্গ নরকের প্রতিচ্ছবি বিম্বিত হয়।
আমি মনের চিকিৎসার জন্য এখন আর কারো কাছে যাই না। আমি মনে করি, আয়না শুধু চুলের স্টাইল এবং বাহিরের চাকচিক্য দেখার জন্য নয়, ভিতরের রূপ-রং এবং মনের আসল স্বরূপ দেখার জন্যও।
আয়নাও আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আয়না আয়নাকে চেনে, বুঝে। কিন্তু মানুষ? না। তারা যে কেউ কেউ “উলাইকা কাল আনআম, বালহুম আদল”।
মানুষ মাটির তৈরি। আয়না হয় বালু থেকে। বালু মাটির সংস্করণ। মানুষ আর আয়নার সৃষ্টিগত রহস্য এক ও অভিন্ন। তাই আয়না তার স্বজাতির আভ্যন্তরীণ রূপ দেখতে পারে। অন্যকথায়, বালু মাটির সহোদর, তারা একে অপরকে বুঝে ও চিনে।
মানুষ মানুষের সহগোত্র বা স্বজাতি হলেও শুধু ধর্ম ও দর্শন থেকে আলাদা নয়, কেন যেন তারা একে অপরের শত্রু, একে অপরের ঘাতক। একজন মানুষ বা প্রজন্ম তার পিতার সামনে দাঁড়িয়ে পিতৃত্বের মহত্ত্ব অনুধাবন করতে পারে না। পিতা তার ছেলেমেয়ের আয়নায় নিছক ফানুস। পিতার কাছে সন্তান নিছক সৃষ্টি বা চোখের সুন্দর। অথবা অহংকারের ঠিকানা! এ এক রহস্য! বিরাট জট! এ দুরত্ব অনেক পশুতে নেই, নেই বালুতেও। আছে সৃষ্টির সেরা মানুষের মধ্যে, যা কখনও স্রষ্টার প্রত্যাশা নয়।
একেবারেই সাধারণ তরল বালু-যা কিনা সিলিকন ডাইঅক্সাইড (ল্যাটিন শব্দ সিলিক্স ঝরষরবী, ইংরেজির ঝরষরপড়হব উরড়ীরফব) দিয়ে আয়না বা গ্লাসের সৃষ্টি হয়। এই বালু এই মানুষের হাতে গড়া আয়না বিশ্বের রূপ দেখতে পারে, দেখাতে পারে, মানুষ পারে না।
মানুষের শরীরেরও বিবিধ পদার্থ আছে। মানবতত্ত্বে লোহা থাকলেও মানুষ লোহার মত নয়। লোহার মত কঠিন মন-মানসিকতা মানুষকে মানায় না। মানব শরীরে নানাবিধ রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও মানুষের অবস্থান এ সবের উর্ধ্বে। মানুষ স্রষ্টার প্রতিনিধি, সৃষ্টির সুন্দর। এই এরাই আবার একটি আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু আয়না আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারে।
কিছু লিখতে গেলে ভাবতে হয়। ভাবনা ওষুধের মত কাজ করে। তাই সকল মানুষের ভাবা উচিত।
এ লেখাটি লিখতে বসে শব্দ ও ভাবনার চেয়েও দামি এক নব রত্মের সন্ধান পেয়েছি। যা আমাকে নতুন করে নিয়ে যাবে আমার সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম, দর্শন ও যাদের কাছে আমি প্রশ্নাতুর।
এখন আমার সামনে অনেকগুলি আয়না। আমার সব দিকে আয়না। সব কিছু আয়না। এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যার সহজ ব্যাখ্যা নেই। বাক্য সাজাবার জন্য অভিধানে নেই উপযুক্ত শব্দ। এ আয়নাটিকে শব্দ ছুঁতে পারে না, ভাব সেখানে মুখ্য, ভাষা সেখানে বধির।