রোটারিয়ান মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়:
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড
এই কথা সকলেই কয়
বাস্তবে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড
প্রয়াত আলোকিত মানুষ
সিদ্দিকুর রহমান হেডমাস্টার
তারি প্রমান ভাই
শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে
নিজ চোখে দেখেছিও তাই।
শতো শ্রমে ঘামে স্কুলের নতুন ভবন করতে
স্থানীয় মানুষ আর সরকারি সহযোগিতা নিয়ে
শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন তাই
সিদ্দিক হেডমাস্টারের গুণের কথা
শাহরাস্তি উপজেলার মানুষ এখনো কয়।
মানুষ মানুষের জন্যে ভাই
মানবতা, মানবপ্রেম সবার মাঝেই চাই।
ভালোবাসো ধনী গরিব উজাড় করে হৃদয়
কবি বলেছেন, এই মানুষেই মসজিদ-মন্দির হয়।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড
জগতের সবাই তাই কয়।
প্রিয় পাঠক, আমার সংবাদকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, কবি হবার পেছনে এবং দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার ক্ষেত্রে যেই মানুষ গুলির স্নেহ, ভালোবাসা , উৎসাহ পেয়েছি তাদের মধ্যেই অন্যতম মানুষ হলেন চাঁদপুর শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান (হেডমাস্টার) । তিনি ছিলেন নিবেদিত একজন মানুষ, আমার বাবার কাছের একজন ভালো বন্ধু। আজ দুজনেই দুনিয়ায় নেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান চাচার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৯০ সালে, তিনি চট্রগ্রামে একটি বিশেষ কাজে এসেছিলেন, তখন তেমন একটা মোবাইলের এতো ছড়াছড়ি ছিলোনা বল্লেই চলে। যাক বলছিলাম চাচার কথা, আমার মরহুম পিতা আবদুল খালেক পাটোয়ারী তখন চট্রগ্রাম নাছিরাবাদ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অটো মেকানিকেল ডিপার্টমেন্টের অফিসার ছিলেন।
সেই সুবাদে শাহরাস্তি উপজেলার অনেক গুণিজনদের দেখার সুযোগ আমারও হয়েছে। তার মধ্যে সিদ্দিক চাচার সাথেও দেখা হয়েছে, ১৯৯০ সালে যখন উনার সাথে দেখা হয়, কথা হয় তখন আমি স্কুলের ছাত্র। চাচার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লেগেছে, তিনি অনেক আন্তরিক।
চাচা প্রায় বলতেন গ্রামের বাড়ি গেলে আমাদের বাড়িতেও বেড়াতে এসো।
১৯৯৪ সালে শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার বাবা সহ চাচার সাথে দেখা করতে যাই, তখন স্কুলের তেমন নান্দনিক ভবন ছিলোনা, কোন মতে চলছে, বিশাল লম্বা স্কুলের খেলার মাঠ, চাচার অফিস কক্ষে বসে চা, বিস্কুট খেলাম। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান নিয়ে আলোচনা করছেন আমার মরহুম পিতার সাথে আমি পাশে বসে দুইজনের কথাগুলি শুনছিলাম। চাচা বলছিলেন স্থানীয় অসহায় মানুষের সন্তানদের তিনি বিনা পয়সায় পড়ার এবং বই দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে স্থানীয় শ্রিপুর মিয়া বাড়ি সহ আশেপাশের লোকদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছেন।
মরহুম ডক্টর এম এ সাত্তার এর দেয়া বৃত্তির টাকা পেয়ে অনেক পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের সংসার চলছে।
চাচার সাথে অনেক স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী হয়ে আছে শুধু কিছু স্মৃতি লেখুনির মাধ্যমে অল্প কথায় তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি – শহর থেকে যখন বাবার সাথে গ্রামে বেড়াতে যেতাম তখন দেখতাম আমাদের শাহরাস্তি উপজেলায় কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন নেই, সাংস্কৃতিক চর্চাও নেই, অবাক লাগতো আমার কাছে। উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পাশে জরাজীর্ণ শিশু একাডেমি লেখা সাইনবোর্ড ঝুলানো দেখেছি। তবে সেখানে কোন শিশুদের সপ্তাহে, মাসে বা বছরেও আসতে দেখতামনা। এর কারণ জানতে প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান চাচার সাথে আলাপ করি। তখন তিনি বল্লেন, তেমন কোন লোক না থাকার কারণেই স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে সামান্য কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাস্তবায়ণ হয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক সংগঠন নেই যে করবে তুমিও কিছু করতে পারো তুমি চট্রগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে আছো, নাটক, লেখালেখি করছো। তুমি শুরু করো আমি সহযোগিতা করবো আমি বল্লাম ঠিক আছে।
যাক ১৯৯৬ সালে কাকতালীয়ভাবে চট্রগ্রাম থেকে এসে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী থিয়েটার ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নামক প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করি, সেইদিন অনেককেই আশার জন্য আহবান জানালেও তেমন কেউ আসেনি। এসেছেন একজন বন্ধুবর ভাগিনা আসাদুজ্জামান ভুঁইয়া সুমন যিনি বর্তমান উপ খাদ্য কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরি করছেন।
শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীকে নিয়ে নানান জনের নানান কথা কি হবে এসব দিয়ে, সাংস্কৃতিক জাহান্নামি কাজ পাটোয়ারীর ছেলে কি শুরু করেছে। সকল কথা উপেক্ষা করে নাটক হোক অসুন্দরের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলি। সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে যৌতুক, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য আমার লেখা নাটিকা আশার আলো প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান চাচার সহযোগিতায় প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে গঞ্জে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, হাটে-বাজারে মঞ্চস্থ করি। এরপর শাহরাস্তি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ এর অর্থায়নে জাতীয় স্যানিটেশন মাস উপলক্ষে ২০০৪ সালে সাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আমার লেখা, পরিচালনায় প্রত্যাশা নাটিকা শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর সদস্যরা মঞ্চায়ন করেছে।
একের পর এক সকল জনকল্যাণমূখী কাজ শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী বাস্তবায়ণ করেছে। এই কাজগুলিতে যাহারা সহযোগিতা করেছেন তাদের নাম না বল্লেই নয়। তারা হলেন- সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মিজানুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার (প্রয়াত), ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সাত্তার, ইঞ্জিনিয়ার সফিকুর রহমান, শাহরাস্তি পৌর মেয়র আবদুল কাদের মাস্টার (প্রয়াত), মেহের ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল মজুমদার, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মিয়াজি, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিন্টু, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার হাসিনা, সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মুশু পাটোয়ারী, সাবেক মেয়র মোস্তফা কামাল, বর্তমান মেয়র শিল্পপতি আলহাজ্ব আবদুল লতিফ, বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব আয়েত আলী ভুঁইয়া, ডাক্তার মফিজুর রহমান মজুমদার, সূচিপাড়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম, মেহের ডিগ্রি কলেজের কবিরুল ইসলাম মজুমদার (প্রয়াত), বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক পরিচালক এম এ খায়ের, সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুজাম্মেল হক পাটোয়ারী, এ্যাডভোকেট ইলিয়াস মিন্টু, এ্যাডভোকেট মো: শামছুল আলম পাটোয়ারী, রেজাউল করিম মিন্টু, নুরুল হক নুরু, নুরু মোল্লা (প্রয়াত), সফিকুর রহমান মজুমদার, আবদুস সাত্তার পিপিএম, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী সহ অসংখ্য মানুষ শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর কাজে অতীতে সহযোগিতা করেছেন বর্তমানেও করছেন। সকলের নাম লিখে শেষ করা যাবেনা। সকলের কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি
শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং মানে আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে শাহরাস্তি-কচুয়া উপজেলার গ্রামে-গঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ১৭০টি স্থানে নাটিকা মঞ্চায়ন করে। এরপর শাহরাস্তি উপজেলায় তৃণমূলে গ্রামে-গঞ্জে পড়ে থাকা সাংস্কৃতিককর্মীদের নিয়ে তোমাকে খুঁজছে শাহরাস্তি ওয়ান-সংগীত প্রতিযোগিতা ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এরপর প্রতিবছর চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে একমাত্র শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক ওরা বেঈমান মঞ্চস্থ করে।
আর শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর সকল কাজে সহযোগিতা করেছেন প্রয়াত প্রিয় চাচা সিদ্দিকুর রহমান হেডমাস্টার যার কথা লিখে শেষ করা যাবেনা, তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রবীণ একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন।
উনার হাত ধরেই অনেক গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পরিবার শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছেন, হয়েছে প্রতিষ্ঠিত যার হিসাব দেয়া সম্ভব নয়।
মানুষ হওয়া সহজ তবে আলোকিত মানুষ হওয়া সহজ নয়। তাই আসুন সবাই ভালো কাজের এবং ভালো মানুষদের মূল্যায়ন করতে শিখি। কাউকে সন্মান দিলে ছোট হয়না বরং নিজেই সন্মানিত হয়।
সবশেষে প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান চাচা, আমার বাবা, মা সহ যেসকল মানুষ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন মহান আল্লাহ উনাদের সবাইকে জান্নাতবাসী করুন।
আর আমরা যারা দুনিয়ায় আছি হিংসা, অহংকার ভুলে সততার সাথে ভালো কাজের মাধ্যমে ঈমানী জীবন অতিবাহিত করতে মহান আল্লাহ সেই তাওফিক দান করুন, সবাইকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুন। মহামারী করোনামুক্ত সমাজ গড়তে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আসুন সবাই কাজ করি, নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।
এই দায়িত্ব সরকারের একার নয় এই দায়িত্ব সকলের।
লেখক পরিচিতি- সাংবাদিক, নাট্যকার , সাংস্কৃতিক সংগঠক।