ডা.আরিফুর রহমান:
আমাদের পান্না অভাগার মতো কোভিডে মরে গেলো। সৌদি আরবে প্রায় ৪০ বছর প্রবাসী মাঝখানে চার বছর কানাডায় ছিলেন তিনি। বরিশাল জিলা স্কুলের ১৯৬৯ ব্যাচের ছাত্র, খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচ প্রকৌশলী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পান্না কোভিড আক্রান্ত হয়ে ১৩ মে, ২০২০ বুধবার সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেছেন। পান্না সৌদি আরবে ন্যাশনাল গার্ডের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তারপর ৪ বছর কানাডায় থেকে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন দেশকে ভালবেসে। তার অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের খেদমত করার শখ হয়েছিল। তার পিতা বরিশালের প্রখ্যাত ডাক্তার খাদেম হোসেন (মরহুম)।
তিনি কদিন ধরেই কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। ডাক্তারদের পরামর্শে বাসায়ই কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ডাক্তার বন্ধু তাকে করোনা টেস্ট করাতে উপদেশ দিলে দুদিন সস্ত্রীক টেস্ট লাইনে দাঁড়ান পান্না। অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে বাসায় ফিরে আসেন তিনি। বুধবার সকালে তার আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে এপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার ইমার্জেন্সী তাকে কয়েক মিনিট নাকে অক্সিজেন দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। তারা জানায় এপোলোতে কোভিড রোগী ঢোকানো যাবেনা। ঢাকা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সীতে গেলে প্রথমে জানায় অক্সিজেন সিলিন্ডার শর্ট, তারপর খুঁজে পেয়ে একটা লাগানো হয়।
পান্নার এডেন্টেন্ডেন্টের সাথে কথা বললে সে ফোনে জানায়, একটি ট্রলিতে করিডোরে পান্না ভাইকে রেখে দেয়া হয়েছে। একটু পরে জানায় তাকে নাকি আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তার একটু পরে জানায় আপনাদের রোগী মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সির বিরুদ্ধে কোন নালিশ নেই কারণ হাজার হাজার রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সীমাবদ্ধতা মেনে নেয়া যায়।
আমার নালিশ হলো, এপোলো হাসপাতালটি বর্তমানে নাকি ২০০০ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে কি যেন নতুন নাম হয়েছে শুনেছি। এই হাসপাতালটি কোন যুক্তিতে একটি একিউট রেসপাইরেটরি ফেইলিওরের পেশেন্টকে ফিরিয়ে দিলো?
পৃথিবীর সব দেশের হাসপাতালে কোভিড সহ সব রোগের চিকিৎসা হয়। ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল না হলে কোভিডের জন্যে আলাদা ইউনিট থাকে। এত দামী হাসপাতালে ইমার্জেন্সী কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাদের এই হাসপাতাল এবং এই ধরনের সব বিলাসী মুনাফাখোর হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
আর কত অসহায় মানুষকে দম বন্ধ করে মারবেন আপনারা? পয়সাওয়ালাদের বাপের দেশ হয়ে গেছে বাংলাদেশ! সরকারী আইন মানবেন না আপনারা? গুণলে একশত মানুষ হবেন না, আপনারা কি দেশটার মানুষদের জন্য কোন স্যাক্রিফাইস করবেন না? আমাদের টাকাই এহাত ওহাত করে কামিয়ে আমাদের মরার সময় এক ঢোক পানি, এক বার মুক্ত নিশ্বাস নিয়েও মরতে দিবেন না? সব অক্সিজেন আপনারা একশ জন মানুষ আটকিয়ে রাখবেন?
অভিশাপ দিচ্ছি বিচার দিচ্ছি সুবিচারক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে, সেইসব মানুষদের বিরুদ্ধে যারা এইসব হারামখোরদের পৃষ্টপোষকতা করেন, তাদেরকে আরো ধনী হতে সহায়তা করেন। এই দুনিয়ায় আপনারা জুলুম করছেন কিন্তু আপনারাও একদিন মরবেন। কেয়ামতের বিচারের মাঠে আল্লাহ আমাদের মজলুমদের ফরিয়াদ শুনবেন। অজ্ঞাত কারণে আল্লাহ পৃথিবীতে আপনাদের ফুরসত দিয়ে রেখেছেন। তবে নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ আর সুপার রিচ কারুনের মতো আপনারাও একদিন হারিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
পান্না, সেইদিন তুই আমাদের সামনে আল্লাহকে প্রশ্ন করিস, হে আল্লাহ, আমার মরা তোমার নির্ধারিত সময়ে হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু চিকিৎসা পেয়ে মরার অধিকার কি আমার ছিলোনা? আমিতো টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলাম! কবরে চিন্তা করিসনা। আল্লাহ তোকে শহীদের মর্যাদা দিবেন।
লেখকঃ সৌদি আরব প্রবাসী