প্রবাস মেলা ডেস্ক: ৭ জুন ২০২২, মঙ্গলবার আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী প্রবাস মেলা অফিস ভিজিট করেন। এসময় প্রবাস মেলার কলাকুশলীদের সাথে তার বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার এক ফাঁকে তার হাতে প্রবাস মেলা’র সৌজন্য কপি তুলে দেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক শহীদ রাজু।
উল্লেখ্য, আতাউর রহমান ঢালী ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার মদনগঞ্জের লক্ষারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আফলাতুন ঢালী, মাতা আমিরুন্নেছা। তারা ৪ ভাই ২ বোন। তিনি সবার ছোট। তিনি ১৯৬৭ সালে বন্দর হাইস্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৬৯ সালে তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
আলাপচারিতায় জানা যায়, আতাউর রহমান ঢালী পুরোদস্তুর একজন জীবন ঘনিষ্ঠ মানুষ। তার কথায় উঠে আসে শৈশবের স্মৃতিকাতর অনেক কথা। তিনি বলেন, শৈশবের স্মৃতি আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না। ছোটবেলায় স্কুল শেষ করেই বই খাতা কোন রকমে বাড়িতে রেখে এসে না খেয়েই দৌড়ে চলে যেতাম শীতলক্ষ্যার পাড়ে। নদীতে ঝাঁপ দিয়েই সাতার কেটে আনন্দ খুঁজতাম। বিলে শাপলা-শালুক তুলতাম। আবার সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলায় কাটিয়ে দিতাম অনেক সময়। গাছে গাছে পাখির ছানা খুঁজতাম। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই তবুও আনন্দের সীমা ছিলো না। শৈশবের সেই দিনগুলো মনের আকাশে এখনও জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, তার দাদার বাড়ি ছিলো চাঁদপুরের মতলব থানায়। গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হলেই দাদা-দাদীর অকৃত্রিম আদর পেতে তিনি চলে যেতেন দাদার বাড়ি। সেখানে গাছ থেকে কাঁচা-পাকা আম-কাঁঠাল পাড়তেন, খেতেন এবং সহপাঠীদেরকে নিয়ে হইহুল্লোর করে সময় কাটাতেন। কখনও কখনও পলো দিয়ে বা জাল দিয়ে মাছ ধরতেন। আবার ডুব দিয়ে কাদার মধ্য থেকে শিং, মাগুর, কই সহ নানা রকমের মাছ তুলে আনতেন। অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আমাদের শৈশব স্মৃতিকাতর সেইসব দিনগুলির কথা হয়তো এখনকার শিশুদের কাছে রূপকথার গল্প মাত্র।
আতাউর রহমান ঢালী একজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার দেশাত্মবোধ প্রশ্নাতীত। তার বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা- তাই তিনি আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে চলেছেন। তাই তিনি দিনবদলের স্বপ্ন দেখতেন। কিভাবে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় তাই নিয়ে কাটিয়েছেন জীবনের অনেকটা সময়। সেই লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের আলোচিত ছাত্র সংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী’ গঠন করে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তখন দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালগুলোতে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই সংগঠনের সাথে একাত্ম হয়ে প্রগতিশীল রাজনীতির দিশা খুঁজে পায়। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আলাপচারিতায় এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রগতিশীল বামধারার রাজনীতির যে আকাল চলছে তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গণসম্পৃক্ততার অভাবের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতি মানুষের জন্য। বিশেষ করে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমরা যদি সেই নীতি থেকে সরে আসি তাহলে রাজনীতির আকাল তৈরি হবেই। বর্তমানে বামপন্থী রাজনীতির যারা ধারক বাহক আছেন তারা অনেকটা হতাশ হয়েই সুবিধাবাদের আশ্রয় নিয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তবে ঐতিহাসিকভাবে এটা সত্য যে, লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি কখনও সুখকর হয়না। কারণ কথায় আছে ছাগল ঘাস খেলে পেট বাড়ে কিন্তু লেজুড় কখনও মোটা হয়না। তবে আমি বিশ্বাস করি, প্রগতিশীল রাজনীতির স্বকীয়তা ও নিজস্বতা এখনও হারিয়ে যাইনি। প্রগতিশীলতার প্রতি এদেশের যুব সমাজের লালিত বিশ্বাস এখনও আছে। তারা জ্ঞান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই সমাজ বদলের চিন্তা আছে। ভবিষ্যতে তারাই সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সুস্থ্য রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে।
আতাউর রহমান ঢালী বরাবরই একজন সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচক। বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সম্পর্কে বলেন, আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং ঐতিহাসিকভাবে এই দলের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতাসীন এই দলটি বাংলাদেশকে বিরাজনীতি করণের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এই দলের নেতৃবৃন্দরা মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও বাস্তবে তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে। বর্তমানে তারা একপেশে রাজনীতি করছেন। গুটিকয়েক মানুষের স্বার্থেই তাদের রাজনীতি। তারা উন্নয়নের জিকির তুললেও দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তাদের কোন কর্মকান্ড চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশের আরেকটি বিশেষ বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি দাবী করে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এর কারণও আছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সেনানায়কের হাত ধরেই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কিন্তু চরম আক্ষেপের বিষয় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের হাত ধরে তারা যে আপোষ করেছে, আমি মনে করি এটা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণকারী বিএনপি’র নীতির বিরুদ্ধে যায়। তবে আমি মনে করি, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির একজন উজ্জ্বল বাহক এবং তিনি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বাংলাদেশের সুস্থ্যধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরে আসলে তার হাত ধরেই বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এক প্রসঙ্গে তিনি তার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে বলেন, মাওলানা ভাসানী এমন একজন মানুষ যিনি তার পুরো জীবন গ্রামীণ আবহে অতিবাহিত করে সাধারণ খেটে খাওয়া দুঃখী মানুষের বিশেষ করে জেলে, তাঁতী, শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে গেছেন। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে বর্তমানে সে রাজনীতি হারিয়ে গেছে।
আতাউর রহমান ঢালী একজন পড়ুয়া মানুষ। অবসরে তিনি বই পড়েন। তার আগ্রহের বিষয় সমাজদর্শন ও রাজনৈতিক ইতিহাসের বই। এছাড়া তিনি সুযোগ পেলেই গ্রামে ছুটে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামীণ জীবন এবং মানুষের হৃদ্যতা আমাকে ভীষণভাবে টানে।
২০১৬ সালে তিনি বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী, ৩ মেয়ে, ১ ছেলে যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন। সেখানে তার ৩ মেয়েই এমএসসি শেষ করে বর্তমানে চাকরিরত আছেন এবং ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
প্রবাস মেলা পত্রিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, যুগের চাহিদায় এই পত্রিকাটির যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। ফলে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে তাদের জন্য পত্রিকাটি যে খবরাখবর প্রকাশ করছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমি এই পত্রিকাটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।