প্রবাস মেলা ডেস্ক: ১৬ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে প্রবাস মেলা অফিস ভিজিট করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। এসময় চা-চক্রে অংশ নিয়ে প্রবাস মেলার কলাকুশলীদের সাথে তার সংগ্রামমূখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার এক ফাঁকে তার হাতে প্রবাস মেলা’র সৌজন্য কপি তুলে দেন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শহীদ রাজু।
উল্লেখ্য, হাবিবুর রহমান হাবিবের জন্মস্থান পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাগইল গ্রামে তার নানা বাড়ীতে। তার পৈত্রিক বাড়ি একই উপজেলার সাহাপুর গ্রামে। তিনি সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তারপর সাড়া মারোয়ারী এসএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঈশ্বরদী জিন্নাহ কলেজ (বর্তমানে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ) থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব ১৯৬৫ সালে পাবনা সাড়া মারোয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা অবস্থায় ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার ছাত্র রাজনৈতিক জীবন বেশ ঘটনাবহুল। তিনি কাদের-চুন্নু কমিটি, ফজলু-চুন্নু কমিটিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে মান্নান-নানক কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সুলতান-রহমান কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ‘৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ‘৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর ‘৯৬ সালে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব ‘৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ নেতাদের অন্যতম অগ্রনায়ক ছিলেন। সেসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেতাদের নিয়ে আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি। শহীদ জেহাদের লাশ কাঁধে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মিছিল করেছি। দিনটি ছিলো ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর। সেইদিনের আন্দোলন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটাতে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিলো।
১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ব্যবস্থার জন্য ‘৯৬-এ যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন আমি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জনতা মঞ্চ’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। দলমত নির্বিশেষে জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আজ যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন তিনিও ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনিই আজ আদালতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি মনে করি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই কেবল বাংলাদেশে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
বর্তমান ছাত্র রাজনীতি নিয়ে প্রাজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন ছাত্রদের দাবি আদায়ে কারও রক্তচক্ষুকে ভয় করিনি। আর এখনকার ছাত্রনেতাদের মধ্যে সেই আদর্শিক চেতনাবোধ আছে কি না সন্দেহ। আজ দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাড়া ছাত্রদের কোনো সমস্যা নিয়ে তারা ক্যাম্পাসে নেই। তাই এখনকার ছাত্রনেতারা শুধুই দলীয় লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতিতে জড়িত। রাজনৈতিক নীতি আদর্শ তাদের কাছে আজ অপান্তেয়।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে হাবিবুর রহমান হাবিব আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব স্বভাবগতভাবে অত্যন্ত সরল এবং দিলখোলা মানুষ হলেও অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। সত্য কথা বলতে ভয় পান না। ছাত্রজীবনের মতো এখনও তিনি নীতি আদর্শকে আঁকড়ে ধরে আছেন। টেলিভিশন টক-শো গুলোতে তার যৌক্তিক সত্যবাদী আলোচনা তারই পরিচয় বহন করে।