হাকিকুল ইসলাম খোকন,নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: আবহমান বাঙালি উৎসব; বাঙালির প্রাণের উৎসব, বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে। মিশনস্থ বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে যোগ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ী মিশনসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি, কনসাল জেনারেল, সিনিয়র কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্পাউজগণ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারত, শ্রীংলকা, নেপাল, সৌদিআরব, মিশর, ইটালী, ব্রাজিল, বেনিন, এন্ডোরা, বারবাডোস, কলম্বিয়া, এস্তোনিয়াসহ প্রায় চল্লিশটি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও অন্যান্য কূটনীতিকগণ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল ও প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বরেণ্য নারীরা।
নারীদেরকে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজিত এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটির তত্ত্বাবধান ও পরিকল্পনায় ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এর সহধর্মীনি মিসেস ফাহমিদা জাবিন। প্রবাসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের এই ধারা বর্হিবিশ্বে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির প্রসারে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে বলে মন্তব্য করেন আগত অতিথিগণ।
মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনকে আবহমান বাঙালির সংস্কৃতির অসংখ্য উপাদান যেমন ঢাক-ঢোল-একতারা, পালতোলা নৌকা, ডালা-কুলা, তালপাতার পাখা, নকশী কাঁথা, মাটির পুতুল, মাটির থালা-বাসুন, কাঁচের চুড়ি, মাছ ধরার পোলো, পালকি, পাটের সুতার সিকা, আলপনা ও নানা-বর্ণের ব্যানার-ফ্যাস্টুন-বেলুন ও শাড়ী দিয়ে সাজানো হয়।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিদেশী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং তাঁর সহধর্মীনি মিসেস ফাহমিদা জাবিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার উপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। বর্ণিল এই অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বশুরু হয় বাংলাদেশ মিশনের কূটনীতিকগণের সন্তানদের দলীয় নৃত্যের মাধ্যমে। ‘মাটি চলো’ শিরোনামের গানের প্রেক্ষাপটে এই দলীয় নৃত্য ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ‘এলোরে নতুন বৈশাখ’ গানের সাথে দ্বৈত নৃত্য, আবার আসিব ফিরে কবিতা আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় গান ‘ইতন পেঘি মেঘি’ এর সাথে একক নৃত্য, ‘ও পৃথিবী’ গানের সাথে মিশনস্থ কর্মকর্তাদের ছেলে-মেয়েদের দলীয় নৃত্য এবং সবশেষে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রীগণ পরিবেশিত কোরাস সঙ্গীত রবীঠাকুরের কালজয়ী বৈশাখী গান ‘এসো হে বৈশাখ’ অতিথিদেরকে পরিচিত করিয়ে দেয় বাংলা সংস্কৃতির চিরায়ত ধারার সাথে।
সাংস্কৃতিক পর্বের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘সৃষ্টি ড্যান্স একাডেমি’র পরিবেশনা। পেশাদার এই একাডেমির সদস্যগণ ‘আইলো আইলো আইলো রে’, ‘ধিন তানানা’ ‘ঢেঁকি নাচে’, ‘সাপখেলা দেখাই’ ও রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘একলা চলো রে’ গানগুলোর সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন। এছাড়া ক্লাসিক নৃত্যও পরিবেশন করে একাডেমির সদস্যগণ।
অতিথিদের মূহূ মূহূ করতালিতে শিক্ত হন শিল্পীগণ। বৈশাখী সন্ধ্যার আনন্দঘন এই আয়োজন বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত মহানগরী নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনকে পরিণত করে একটুকরো বাংলাদেশে। বৈচিত্রময় পোশাক ও বিচিত্র রং এর সমাহারে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয় পুরো আয়োজন জুড়ে। সৌন্দর্য্যরে চ্ছটায় তৈরি হয় এক অনাবিল শান্তির আবহ। ভিনদেশী, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রায় দুইশতাধিক মানুষ অবগাহণ করে দৃষ্টিনন্দন এই পরিবেশনার নির্মল আনন্দ। তাঁদের অনেকের মূখেই ছিল বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা। খাবার ম্যেনুতে ছিল ঘরে তৈরি পিঠা-পুলি, নাড়–, মুড়ি-মুড়কি-মুয়া, সাজ-বাতাসা, পায়েস, মিষ্টিসহ অন্যান্য বাঙালি খাবার।
অনুষ্ঠানটিতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিদেশী অতিথিদের সামনে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরবণ তুলে ধরেন। তিনি জানান বাংলা বর্ষবরণের এই ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ ধারণ করে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”।
উল্লেখ্য গতবছরও বাংলাদেশ মিশন বিদেশীদের সাথে নিয়ে বাংলা নববর্ষ উৎসব উদযাপন করে।