হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্টশিয়াল নির্বাচনে ডেমক্র্যাট প্রার্থীকে বিজয়ী করার মাধ্যমে ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার সুসংহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার-অ্যাসাল’র ১১তম বার্ষিক কনভেনশন।
‘সাউথ এশিয়ানস – আওয়ার মুভমেন্টস, আওয়ার স্ট্রেন্থ’- এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে স্থানীয় সময় ১ ডিসেম্বর শনিবার ম্যানহাটানের লোকাল ইউনিয়ন হলে বর্ণাঢ্য আয়োজন আর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় অ্যাসাল’র এই বার্ষিক কনভেনশন।
যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারায় দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশীয় ইমিগ্র্যান্টদের একমাত্র সংগঠন অ্যাসালের এ ব্যতিক্রমী মিলনমেলা শুরু হয় এদিন বিকেল প্রায় ৪টায় আর শেষ হয় রাত সাড়ে ৯ টায়।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় এ কনভেনশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লেবার লিডার অ্যাসালের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা মাফ মিসবাহ উদ্দিন। উদ্বোধনী ভাষণে মাফ মিসবাহ উদ্দিন অ্যাসালের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, আদর্শ, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মূলধারার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয়দের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কনভেনশনে বিগত বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অ্যাসালের ন্যাশনাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী। তিনি এসময় অ্যাসালের ন্যাশনাল কমিটিসহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন।
কনভেনশনে বক্তারা বলেন, আগামী ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্টশিয়াল নির্বাচনে ডেমক্র্যাট প্রার্থীকে বিজয়ী করার মাধ্যমে ইমিগ্যান্টদের অধিকার সুসংহত করতে হবে। আমেরিকার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা, ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মূলধারায় আরো জোরালো অবস্থানে নিতে হবে এশিয়ানদের। কোন মানুষই যাতে বৈষম্যের শিকার না হন সে বিষয়েও সোচ্চার হতে হবে সকলকে। তারা বলেন, বাংলাদেশিসহ সাউথ এশিয়ানরা যাতে সংবিধান প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হন সে লক্ষে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা পূরণেও উদ্যোমী হতে হবে। সিটিজেনশীপ নেয়া সকলকে ভোটার হতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসালের ইলেভেনথ এন্যুয়েল কনভেনশন কমিটির চেয়ার ও অ্যাসাল ব্রুকলীন চ্যাপ্টার প্রেসিডেন্ট ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট কম্পট্রোলার থমাস দিনাপলি, নিউইয়র্ক স্টেট সেনেট মেজরটিলি লিডার আন্দ্রেয়া স্টুয়ার্ট-ক্যাসিনস, নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিনজার, ম্যানহাটান বরো প্রেসিডেন্ট গালে এ ব্রুয়ার, ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্ট রুবেন ডিয়াজ জুনিয়ার, নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট ১১ থেকে কংগ্রেসম্যান-ইলেক্ট ম্যাক্স রোজ, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট ১১-এর সিনেটর-ইলেক্ট জন ল্যু, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট ৩১-এর সিনেটর-ইলেক্ট রবার্ট জ্যাকসন, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৭৯-এর অ্যাসেম্বলিম্যান (ব্রঙ্কস) মাইকেল এ ব্লেক, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ২৪-এর অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিন, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ২৯-এর অ্যাসেম্বলিওম্যানম এলিসা এল হান্ডম্যান, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৫৫-এর অ্যাসেম্বলিওম্যান ল্যাট্রিস ওয়াকার, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৫৯-এর অ্যাসেম্বলিওম্যান জেমিক উইলিয়ামস, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৪৩-এর অ্যাসেম্বলিওম্যান ডায়না সি রিচার্ডসন, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৬১-এর অ্যাসেম্বলিম্যান-ইলেক্ট স্টেটেন আইল্যান্ড চার্লস ডি ফল, অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৮৭-এর অ্যাসেম্বলিওম্যান-ইলেক্ট করিন্স রেয়স, কাউন্সিলের মেরিটি লীডার ডিস্ট্রিক্ট ৩৫-এর কাউন্সিলম্যান লৌরি এ কাম্বো, ডিস্ট্রিক্ট ২৪-এর কাউন্সিলম্যান রোরি ল্যান্সম্যান, ডিস্ট্রিক্ট ৫-এর কাউন্সিলম্যান বেঞ্জামিন কালোস, ডিস্ট্রিক্ট ১৫-এর কাউন্সিলম্যান রিটসি টরেস, ডিস্ট্রিক্ট ২৩-এর কাউন্সিলম্যান ব্যারি গডেনচিক, ডিস্ট্রিক্ট ৩১-এর কাউন্সিলম্যান ডোনোভান জে রিচার্ডস, ডিস্ট্রিক্ট ৪০-এর কাউন্সিলম্যান ম্যাথিও ইগোনে এমডি, ডিস্ট্রিক্ট ৪৫-এর কাউন্সিলম্যান জোমানী ডি উইলিয়ামস, ডিস্ট্রিক্ট ২-এর কাউন্সিলওম্যান ক্যারলিনা রিভেরা।
কনভেনশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনার ও প্যানেল ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেলিস্টরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শেষে তাদের সুপারিশনামা পেশ করেন।
‘সাউথ এশিয়ান আমেরিকান – ডিফেন্ডিং আওয়ার কেন্ডিডেইটস’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জর্জিয়া স্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট ৬-এর সিনেটর-ইলেক্ট শেখ রহমান, পেনসিলভানিয়ার সাবেক লিউটেনান্ট গভর্ণর প্রার্থী ড. নীনা আহমেদ এবং রিচমন্ড কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টের স্পেসাল রেফারি হেমেলি জে প্যাটেল, ইএসকিউ। মডারেটরের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসাল’র ন্যাশনাল পলিটিক্যাল ডিরেক্টর আলী নাজমী, ইএসকিউ, ও নিউইয়র্ক স্টেট ডেমোক্রেটিক নিউইয়র্ক সিটির ফিল্ড ডাইক্টের জামিলা এ উদ্দিন।
প্যানেল আলোচকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গৃহীত নানা পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ানদের ইমিগ্রেশন ইস্যুসহ কমিউনিটির সার্বিক উন্নয়নে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম ও ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী বক্তব্য এবং গৃহীত প্রদক্ষেপে ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব বক্তব্য এবং গৃহীত প্রদক্ষেপকে আমেরিকার মূল্যবোধ ও মানবাধিকার পরিপন্থী উল্লেখ করে তারা বলেন, আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নই। ট্রাম্পের হিংসা, জাতি, বর্ণ ও ধর্মে বিভক্তির বিরুদ্ধে। তারা বলেন, ভয় পেলে চলবে না একে অন্যকে প্রটেক্ট করতে হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আগামী ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্টশিয়াল নির্বাচনে ডেমক্র্যাট প্রার্থীকে বিজয়ী করার মাধ্যমে ইমিগ্যান্টদের অধিকার সুসংহত করতে হবে।
কনভেনশনে মূলধারার রাজনীতিকরা অংশ নিয়ে অ্যাসালের বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, আমেরিকার অর্থনীতি ও রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ানরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীতে তারাই হবেন হবেন অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক শক্তি। অনেক কিছুই নির্ভর করবে তাদের সমর্থনের ওপর। মুসলিম এবং ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিকে আশ্বস্ত করে তারা সবসময় ইমিগ্র্যান্টদের পাশে থাকার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ‘পাবলিক স্কয়ার : স্পিক ইউর মাইন্ড- ফিল ফ্রি টু ক্রিটিক অ্যাসাল’ এর মডারেটরের দায়িত্বে ছিলেন ব্রঙ্কস চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তাহমিদুল হক।
১১তম বার্ষিক কনভেনশন উপলক্ষে অ্যাসাল ‘সাউথ এশিয়ানস – আওয়ার মুভমেন্টস, আওয়ার স্ট্রেন্থ’ শিরোণামে তথ্য সমৃদ্ধ একটি বিশেষ জার্নাল প্রকাশ করা হয়।
বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে এ অনুষ্ঠানে মূলধারার রাজনীতিক, কংগ্রেসম্যান, নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, অ্যাসাল-এর সদস্য, কমিউনিটি লিডারসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।