এম. আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামীম, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
সিডনি থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা পত্রিকা নিয়ে ইদানিং বেশ কিছু গসিপ চলছে। এ সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হওয়া উচিত। সিডনি থেকে প্রকাশিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা পত্রিকার নাম হচ্ছে ‘আভাস’। আভাসের সম্পাদনা পরিষদের ফারুক খানের সাথে আলোচনায় জানা যায় যে ১৯৯৫ সালের শুরুতে ফারুক খানের উদ্যেগে কমিউনিটির আরও ৪ জন সম্মানিত ও এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ সদস্যদের নিয়ে ফারুক সাহেবের বাসায় প্রথম সভা হয় এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা পত্রিকা প্রকাশনার উদ্যোগ নেয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা পত্রিকার সম্পাদনায় ছিলেন গোলাম মোস্তফা, টুকু ভাই, আনোয়ার আকাশ, শেরওয়ান জামান ও ফারুক আহমেদ খান। পরে অবশ্য এহসানুল হক, লরেন্স ব্যারল ও আকিদুল ইসলাম যোগ দিয়েছিলেন। প্রথম সংখ্যা প্রকশিত হয় ১ জুন ১৯৯৫। প্রায় দু’বৎসর চলার পর আর্থিক সমস্যায় পড়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে কোন পত্রিকাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার মত খুব কম লোকই ছিল। সম্পাদনা পরিষদের সদস্যদের নিজেদের পয়সা দিয়ে পত্রিকাটিকে টিকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, এ পত্রিকার প্রায় ২০০ নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। প্রায় ১০০ এর উপরে গ্রাহক নিয়মিত পত্রিকা ডাক যোগে পাঠানো হত। তবে তিনি একটি মজার ঘাটনাও জানান। তখন আভাসের ৩য় সংখ্যা প্রকাশের প্রস্ততি চলছে। এমন সময় আমাদের কমিউনিটির একজন সদস্য টুকু ভাইকে ফোন করে পত্রিকাটিকে বন্ধ করার হুমকি দেন। পরে অবশ্য ওনার সাহস হয়নি এ ব্যাপারে আর কথা বলার।
এর আগে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার মুখপত্র হিসাবে হাতের লেখায় ‘চলন্তিকা’ প্রকাশিত হত বেশ কয়েক বৎসর যাবত। মূলত এসোসিয়েশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মিসেস নাসিম হোসেনের উদ্যোগে ওনারই হাতের লেখায় ‘চলন্তিকা’ শুরু হয়। তবে ১৯৯৪ সালে প্রথম ছাপার অক্ষরে কম্পিউটারাইজ ‘চলন্তিকা’ প্রকাশিত হয়। এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় ছাপার অক্ষরে কোন প্রকার পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সম্পাদনায় ছিলেন এসোসিয়েশনের তৎকালীন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারুক আহমেদ খান এবং এহসানুল হক পরিকল্পনা ও ডিজাইনে সহযোগিতা করেন।
তারও আগে অবশ্য হাতের লেখায় বাংলা পত্রিকা ‘সাঁকো’ প্রকাশিত হয়। এটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ায় প্রকাশিত প্রথম বাংলা পত্রিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা। নব্বই দশকের শুরুতে ‘সাঁকো’র হাতে লেখে ফটোকপি করে প্রকাশ করা হয়। সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য শাহীন শানেওয়াজ বলেন, তখন কমিউনিটিতে দেশের বা স্থানীয় খবর পাওয়ার সুযোগ খুবই কম ছিল। এ ধারণা থেকেই ওনারা কয়েকজন মিলে এটি বের করার উদ্যোগ নেন। শাহীন শানেওয়াজ আরও জানান, তিনি নিজেই হাতে লিখতেন এবং তারপর ফটোকপি করে কমিউনিটিতে বিতরণ করতেন। এটিকে প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে মূল্যায়ন করা উচিত। সম্পাদনায় ছিলেন শাহীন শানেওয়াজ, আশীষ বাবলু, সাহাদত হোসেন ও আমীর হোসেন।
‘প্রবাহ’ নামে একটি মার্জিত বাংলা পত্রিকা বের হয় নভেম্বর ১৯৯৬ সালে। অত্যন্ত জনপ্রিয় এ মাসিক পত্রিকা ছয় বছর অর্থাৎ ২০০২ সাল পর্যন্ত সারা অস্ট্রেলিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে। যার সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন আনিসুর রহমান, রফিক হাসান, বাবলা প্রমুখ।
পরে আরও একটি পাক্ষিক পত্রিকা ‘স্বদেশ বার্তা’ বের হয় মরহুম নুরুল আজাদের আর্থিক সহযোগিতায় ও লুৎফুর রহমান এর সম্পাদনায়। লাভলী আলম, রেজা আরেফিন, মরহুম গাজী শাখাওয়াত, মোজাম্মেল আরিফ কর্তৃক দেশকণ্ঠ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ পত্রিকা বেশ লম্বা সময় কমিউনিটিতে বিশেষ সুখ্যাতি লাভ করে।
এর পর উঠানে ধান শালিক, সুপ্রভাত সিডনি, খেয়াঘাটসহ আরও পত্রিকা বের হয়। ধীরে ধীরে পত্রিকার মান, ডিজাইন, প্রচারণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। এখনতো আরও অনেক পত্রিকা বের হচ্ছে।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রবাসে একটি মানসম্মত পত্রিকা চালাতে কত পরিশ্রম, সময়, মেধা ব্যয় করতে হয় তা শুধু প্রকাশকরাই জানেন। তবে কাউকে বা কোনো পত্রিকাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সবাই তাদের যোগ্যতা দিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কমিউনিটিকে ভালো কিছু উপহার দিতে। যারা হাতে লিখে বাংলা পত্রিকার শুভ সূচনা করেছিলো, তাদেরকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।