প্রবাস মেলা ডেস্ক: ২০২১ সালের মার্চে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় মাস কারাভোগ করেছেন অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা। এর প্রায় ৪ বছর পর তাকে গ্রেপ্তার এবং হয়রানির বিষয়ে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন ও সৌদি প্রবাসী জুয়েলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ জানালেন এই অভিনেত্রী।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সম্মলনে এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন রোমানা স্বর্ণা।
সংবাদ সম্মেলনে রোমানা সম্মেলনে বলেন, ২০২১ সালের মার্চে একটি মিথ্যা মামলায় আমি গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। অনেকেই সে সময় জানতে চেয়েছিলেন কি হয়েছিল, কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মিডিয়া ট্রায়ালে আপনারা যেভাবে জেনেছেন তার পুরোপুরি উল্টো ঘটনা ঘটেছিল আমার সঙ্গে।
তিনি বলেন, স্বামীর করা মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের দেড় মাস পর জুয়েলের জিম্মায় জামিনে বেরিয়ে আসি। মিথ্যা মামলা বলছি এ কারণে স্বামীর শর্ত মেনে নেওয়াতে তিনি মামলা তুলে নেন। মূলত তার কথা না শোনাতে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তার করে আমায়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সাবেক ডিবি হারুন গ্রেপ্তার দেখান।
সংবাদ সম্মেলনে স্বর্ণা বলেন, আমার ক্যারিয়ারে যখন সুসময় তখন বিয়ে করি কামরুল হাসান জুয়েলকে। সময়টা ২০১৯। তবে বিয়ের পরপরই বেরিয়ে আসে স্বামীর আসল রূপ। পারিবারিক দ্বন্দ্ব এক পর্যায়ে গড়ায় মামলা মোকদ্দমায়। আমাকে মিথ্যা বলে জুয়েল বিয়ে করেছিল। তিনি এর আগেও বিয়ে করেছেন। আগের বউয়ের সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আমার কাছে গোপন করে। যা পরবর্তীতে জানতে পারি। এরপর থেকে বৈবাহিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি। শুরু হয় আমার ওপর বিভিন্ন রকমের নির্যাতন।
কখনো যদি তার ফোন ধরতে এক মিনিট দেরি করতাম তাহলে অমানবিক হয়ে যেত। একটা পর্যায়ে তার সঙ্গে ঘর না করার সিদ্ধান্ত নেই। তাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। যার মাসুলও দিতে হচ্ছে। নির্যাতনের জন্য কয়েকবার সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। বিয়ের আগে বলেছিল কাজ করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু বিয়ের পর দেখি তার উল্টো চিত্র। আমাকে কাজ করতে দেয়নি। বিয়ের পর তার বাসায় আমাকে নেয়নি। আমি মায়ের বাসায় থাকতাম। একবার আমার প্রথম ঘরের সন্তানকে কিডন্যাপ করায় শুটিং থেকে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে অবৈধ টাকা করেছে। তাদের দিয়ে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতো।
এক বন্ধুর মাধ্যমে জুয়েলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। অনেক দিন আমার পেছনে ঘুরে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে বলে আমি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না। আর কাজ করতে পারব না। নানা ভাবে নির্যাতন শুরু করে। বিয়ের পর মায়ের বাসাতেই থাকতে হয়। ওর বাসায় তুলেনি। এক পর্যায়ে জানতে পারি প্রথম স্ত্রী তার সঙ্গে থাকে। দিন দিন নির্যাতনের পরিমাণ বাড়তে থাকায় দুই বার তাকে ডির্ভোস দেই। শেষ পর্যন্ত আমাকে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ডির্ভোস তুলে নিলে মামলা তুলে নেবে এমন শর্তও দেওয়া হয়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে অপকর্ম করতে সহযোগিতা করত। উপায় না থাকায় একটা পর্যায়ে সমঝোতা করি। মামলা তুলে নেয়। প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডির্ভোস দিলে আমাকে আটকানোর জন্য এই মিথ্যা মামলা দিয়ে মান-সম্মান সব শেষ করে দেয়। ওর কথা ছিল আমাকে এমন ভাবে পচানো হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কাজ করতে না পারি। কাউকে মুখ দেখাতে না পারি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ডিবি হারুনকে দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করায়। ওর থেকে হারুন ভালো টাকা নিয়েছে। দেড় মাস জেলে থাকার পর ডির্ভোস দিতে পারব না সেই শর্তে জামিন করায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে এই শর্তে রাজি হই।
আমাদের ডিভোর্স চলাকালীন ভয় ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে থাকত। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখে। সারাক্ষণ সন্তান পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। পরিবারের কথা ভেবে সবকিছু মুখ বুঝে এতদিন সহ্য করেছি। জামিনে বেরিয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি যায়। আমি তখনো গৃহবন্দি। দেড় বছরের মতো এভাবে ছিলাম। তখন তার প্রথম স্ত্রীও ওখানে যায়। তখন আমাদের যোগাযোগ একটু কম হতো। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। তার আগে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। সেখানে গিয়ে তাকে জানাই আমি দেশে নেই। এরপর থেকে আমাদের দূরত্ব।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুয়েলকে সহযোগিতা করার কারণ হচ্ছে, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলত। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করত। এসব কথা আমাকে বলেছিল যখন সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবৈধ কাজে সহযোগিতা করত। বিনিময় পেত মোটা অংকের টাকা। জুয়েল মূলত হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের টাকা পাচার করত।
জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলা সহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল, যেগুলো ভিত্তিহীন। এই বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেনি। এবং আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেনি। মূলত আমাকে সম্মানহানি করার জন্যই এসব ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়। স্বামীর নির্যাতনের কথা অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসানকে অবগত করলেও সাড়া পায়নি। সাবেক ডিবি প্রধান হারুন জুয়েলের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিতো। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালেও কাজ হয়নি। যার কারেণে সবকিছু মুখ বুঝে মেনে নিতে হয়েছিল। অপরাধ না করেও অপরাধী হয়েছিলাম। সর্বশেষ জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্ন হুমতি দিয়েছে। আজ যেসব কথা জুয়েলকে নিয়ে বলেছি তার সব প্রমাণ আমি দিতে পারব।