ক. ম. জামাল উদ্দীন, জেদ্দা, সৌদি আরব প্রতিনিধি: আজ ২৪ এপ্রিল, ২০২০ শুক্রবার সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে পবিত্র রমজানের প্রথম দিন। বছর পরিক্রমায় আবার ও আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে রহমত, বরকত, মাগফিরাতের ও নাজাতের মাস এই পবিত্র রমজান। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের এ মহাদুর্যোগেই সৌদি প্রবাসীদের রমজানের প্রথম রোজা অতিবাহিত হল। ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ এবং লকডাউন বলবৎ থাকায় অনেক প্রবাসী গৃহবন্দি হয়ে কর্মহীন অবস্থায় দূর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করতেছেন।
প্রতি বছর রমজানের আগের দিনে প্রবাসীদের অনেক উৎসব মুখর পরিবেশে রোজার আগমনের সাথে সাথে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি খরিদ করতে দেখা যায়। যেমন বাঙালিরদের ইফতার আইটেমের সর্বজন প্রিয় ছোলা ( চনা)। এবং অন্যান্য মনোহরী দ্রব্যাদী যেমন, মুড়ি, চিরা, ডাল ইত্যাদি। এবারের রমজানে আগের সেই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়নি। তবে গত কাল জেদ্দার গুরাইয়াতে যেখানে বেশীর ভাগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আনাগোনা দেখা যায় সেখানে অনেক নিয়ন্ত্রিত ভাবে কারফিউ শিথিলের সময় কিছু কিছু প্রবাসীদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তথা ছোলা, চিনি, মুড়ি কিনতে দেখা যায় প্রবাসীদের। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক হতাশাব্যঞ্জক। প্রতি বছর দেশটির বিভিন্ন ইফতারীর দোকানে রমজানের পড়ন্ত বিকেলে বাহারী ডিজাইনের বিভিন্ন রকমের ইফতারীর পসরা সাজিয়ে বসে থাকা; দোকান দারের সে জৌলুস আর এই রমজানে চোখে পড়ার মত নেই। সামন্য কিছু দোকান খোলা থাকলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রিত ভাবে বিকাল ৫টা পর বন্ধ করে দিতে হয়। এ ছাড়াও পুরো সৌদি আরবে জুড়ে ইফতারীর আসর বসে। দেশটি বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে যার যার সামর্থ অনুযায়ী রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য সবাই আত্মনিয়োগ করে। রমজান মাসে সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদে তাবু স্থাপন করে রোজাদারদের জন্য ইফতারীর ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদ ছাড়াও রোজাদার আনাগোনা হয় এমন সম্ভাব্য স্থানে এ বারের রমজান সেই জৌলুসও নেই। প্রতি বছর রমজানে তারাবীর নামজের সময় অনেক উৎসাহ ও আনন্দ নিয়ে মুসল্লীদের মসজিদে যাওয়ার এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হতো; এ রমজানে সে দৃশ্য আর চোখে পড়ার মত নেই।
প্রবাসীদের প্রতি বছর রমজানে আগে দেশে পরিবার পরিজনের জন্য ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পাঠানোর যে হিড়িক পড়ত তা কিন্ত এবার দেখা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু প্রবাসী প্রতিবেদক কে বলেন, ভাই নিজে খাওয়ার টাকা শেষ হয়ে আসছে, বাড়িতে কীভাবে পাঠাই? দেশে আত্মীয় স্বজন থেকে ধার দেনা করে চলার জন্য বলেছি। জানিনা এভাবে আর কত দিন থাকবে?
অনেক পরিবারে দেখা যায় একজনই উপার্জনক্ষম
ব্যক্তি। সে সব পরিবারের জন্য এখন সময়টা অনেক হতাশা, দু:খ এবং দুশ্চিন্তার । কেননা পরিবারের কর্তার বেকার হয়ে যাওয়া মানে পুরো পরিবারের উপর এর প্রভাব বিস্তৃত হওয়া। এমন অনেক প্রবাসী আছেন যারা প্রতি নিয়ত এ রকম হতাশা ও দুশ্চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কিছু কিছু সমীক্ষার জরিপে উঠে এসেছে, মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে গত কয়েক দিনে করোনা ছাড়াও হৃদরোগে বা হার্ট অ্যাটাক জনিত কারণে অনেক প্রবাসী মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে। একুশে টেলিভিশন অনলাইন পোর্টালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত দুই মাসে হৃদ রোগে বা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন অন্তত ৫৯ জন বাংলাদেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মহীন অবস্থায় পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত জীবনে দুশ্চিন্তা এবং হতাশাই এর মূল কারণ।
এর পরও প্রবাসীরা মনে করতেছেন, মহান আল্লাহর রহমতে রমজান শুরু হয়েছে। এই মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারীম। এই মাস হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এক রাতের ( শবে ক্বদর ) মাস, বদর , খন্দকও মক্কা বিজয়ের মাস হলো এই পবিত্র রমজান মাস। এ পবিত্র মাসে
মানুষের মাঝে খুশীর ফোয়ার বয়ে যায়। রমজানের আগমনে সমগ্র মুসলিম জাহান নব উদ্যমে জেগে উঠে। বিচিত্র ধরনের আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায় আসমান ও জমিনে। সৃষ্টি জগত ভরে উঠে রহমতের ফল্গুধারায়। ইনশাআল্লাহ অচিরেই মহান আল্লাহর অপার কৃপা এবং দয়ায় এ মহামারী শেষ হবে। আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসবে। এ সুন্দর ধরণীতে আবার শুরু হবে কোলাহলপূর্ণ জীবন। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন “ফা ইন্না মা’য়াল উসরি ইউসারান ” অর্থাৎ নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। এ পবিত্র রমজানে মহামহিম করুণার সাগর দয়ার ভান্ডার মহান আল্লাহর নিকট এটাই প্রার্থনা পৃথিবীবাসীর।